'শঠতাপূর্ণ আচরণের মূল্য সরকারকে দিতে হবে'

হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে প্রতিহত করতে যা করা হয়েছে বাংলাদেশে তা নজিরবিহীন। একদিকে সরকার তাদের লংমার্চের অনুমতি দিয়েছে। অন্যদিকে সব বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ করে দিয়ে লোক আসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। যারা ভেঙে ভেঙে আসার চেষ্টা করেছেন তাদের ওপর হামলা হয়েছে। রাতের বেলায় হরতাল ডাকা হয়েছে। সমাবেশের অনুমতি দিয়ে বলেছে রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়া যাবে না। এটা অগণতান্ত্রিক। দ্বিমুখী আচরণ। এই শঠতাপূর্ণ আচরণের মূল্য সরকারকে দিতেই হবে। শুক্রবার চ্যানেল আইয়ের টকশো 'তৃতীয় মাত্রা'-এ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম।শওকত মাহমুদ বলেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের মধ্যে অতি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। শাহবাগের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহবাগ মঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ায় একমত_ এরকম খবরও বেরিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলেম সমাজের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ব্লগারদের গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। আবার হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অনুমতি দিয়ে তাতে বাধা সৃষ্টি করেছে। আমার মনে হয় না শেখ হাসিনা এগুলো মন থেকে করছেন। তিনি মারাত্দক টানাপড়েনের মধ্যে আছেন। তিনি কমিউনিস্টদের মন রক্ষা করবেন নাকি ইসলামপন্থিদের মন রক্ষা করবেন_ সেটিই তার সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে শ ম রেজাউল করিম হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে বিএনপির সমর্থনের সমালোচনা করে বলেন, বিরোধী দল হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির গভীরে গিয়েছিল কিনা জানি না। ১৩টি পয়েন্টে তাদের দাবি। একটি হলো_ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ভাস্কর্য আছে তা ভেঙে ফেলতে হবে। কিছু বিষয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কারও দ্বিমত হওয়ার সুযোগ নেই। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ের দায়িত্ব। কিন্তু, হেফাজতের ১৩ দাবির মধ্যে একটি আছে যাতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত তো দূরের কথা, বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় বড় ধরনের হানাহানি বা অঘটন এড়াতে দুই দলেরই বিবেচনাপ্রসূত অবস্থান নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক চর্চায় পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাবে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না গিয়ে উল্টো পেছনের দিকে যাচ্ছি। জাতীয় ঐকমত্যের জায়গাগুলোতে সরকার ও বিরোধী দল সমঝোতায় পেঁৗছাতে না পারায় নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। শওকত মাহমুদের এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শ ম রেজাউল বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব অপরাধীর বিচার করা। কোন ধর্মাবলম্বী তা দেখা নয়। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে এ অভিযোগটি সত্য নয়। ইসলাম ধর্মে কোনো ফেতনা-ফ্যাসাদের কথা বলা নাই। জোর করে কারও বাড়ি দখলের কথা বলা নাই। সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক শব্দগুলো এদেশে উচ্চারণের প্রয়োজন ছিল না। রাম-রহিমের বাড়ি এক জায়গায় এটা আমাদের ঐতিহ্য। মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু-মুসলমান সবাই করেছে। ঢাকায় ট্রাইব্যুনালের রায়ের সঙ্গে বেগমগঞ্জের হিন্দু ১০টি বাড়িওয়ালার কোনো সম্পর্ক নেই। ওদের বাড়ি যখন আক্রান্ত হয় তখন সঙ্গত কারণে প্রশ্ন আসে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আসে তারা সঠিকভাবে আইনের চর্চা করতে পারলে এটা হতো না। শওকত মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে কেউ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করার চিন্তা করলে মানুষ তা গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনতার যে ঘোষণাটি আছে সেখানে পরিষ্কার বলা আছে যে, তিনটি লক্ষ্যে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে। তা হলো_ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। এর মাঝে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই। এই তিনটিকে গ্রহণ করলে ধর্মের বিচারে, রাজনীতির বিচারে মানুষ মারা, মানুষকে একপাশে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ধর্মকে টেনে আনার রাজনীতি মূলত বাম রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে।

Source: Bangladesh Pratidin