'গণমাধ্যমের ভূমিকা দেখে বিস্মিত হয়েছি'

বর্তমান সংঘর্ষ, সহিংসতা বন্ধের সহজ সমাধান বড় দুই দলের হাতে। শুধু দুটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে একমত হতে হবে। একটা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বানচাল করার যে কোনো পদক্ষেপ এবং ট্রাইব্যুনালকে বাতিল দাবির বিরুদ্ধে দুটি দলকে দাঁড়াতে হবে। বিনিময়ে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হলে বিএনপি নিজেই জামায়াত থেকে দূরে সরে যাবে। তারা জামায়াতের সঙ্গে আছে সরকারের ওপর চাপটা রাখার জন্য। শনিবার চ্যানেল আই'র টকশো 'তৃতীয় মাত্রা'-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম।

আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণমানুষের আবেগ ও প্রবল জনমতকে পুঁজি করে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ন্যায্য দাবিকে আড়াল করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। বিএনপি আগামী নির্বাচনে জিততে চায়। তাই নির্বাচনটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায়। এ জন্য প্রয়োজনে তারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গেও হাত মেলাবে। শাহবাগের ব্যাপক একটা গণজাগরণকে ম্যানিপুলেট করা হয়েছে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, সরকারের লোকজন যেভাবে মঞ্চ দখল করেছে তাতে অসাধারণ এই গণজাগরণটির অন্তর্নিহিত শক্তি কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী বললেন, এটা কাদের মোল্লার রায়ের আগে হলে রায় ভিন্ন হতে পারত। কয়েকজন মন্ত্রী গণসমাবেশে গিয়ে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই স্লোগান দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আশা করব ট্রাইব্যুনাল রায় দেওয়ার সময় জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে বিবেচনায় নেবেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর কি এ ধরনের কথা বলা উচিত? সরকারের এ ইনভলভমেন্ট গণজাগরণের শক্তিকে দুর্বল করেছে।

তিনি বলেন, কিছু দিন গণমাধ্যমের আচরণ দেখে হতাশ হয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পার্টি অ্যাক্টিভিস্টের ভূমিকা পালন করছে। গত ১৫-২০ দিনের সহিংসতায় এক ধরনের মিডিয়া শুধু দেখছে জামায়াত-শিবিরের বর্বরতা। জামায়াত-শিবির প্রত্যেকটি জায়গায় আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে তারপর পুলিশ জীবন বাঁচাতে গুলি করেছে- এটা বিশ্বাস করতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু এই পুলিশ মানিকগঞ্জে ইসলামী দলগুলোর হরতালে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। বাম রাজনৈতিক দলগুলোর তেল-গ্যাস রক্ষার আন্দোলনে বিষাক্ত গ্যাস, মরিচের গুঁড়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা অনশন করতে গেলে অমানবিক নির্যাতন করেছে। আরেক ধরনের মিডিয়া দেখছে শুধু পুলিশের বর্বরতা। জামায়াতের ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা তাদের চোখে পড়ে না। একটা পত্রিকা দেশের এ রকম ক্রান্তিকালে প্রতিদিন একটা না একটা ব্যানার হেডলাইন করেছে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকে দেওয়ার জন্য। আরেকটি পত্রিকা হেডলাইন করেছে 'এই রায় মানি না' এটা কি নিউজের হেডিং হয়? অবাক লেগেছে যিনি হেডলাইনটা করেছেন তিনি বাংলাদেশে সবচেয়ে নামকরা সম্পাদকদের একজন। আসিফ নজরুল বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঋণের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এসব ডামাডোলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুশাসন ইস্যুটিই হারিয়ে গেছে। বিএনপি দুর্নীতি, দুরাচার করেছে বলে মানুষ তাদের বিদায় দিয়েছে। আমরা তো চাই না এগুলোর পুনরাবৃত্তি হোক।

Source: Bangladesh Pratidin